সাম্প্রতিক নোটিশ

জুলাই বিপ্লব ও এক ফ্যাসিবাদের পতন

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫ জুলাই বিপ্লব

জুলাই বিপ্লব ও এক ফ্যাসিবাদের পতন

বাংলাদেশ কোটা সংস্কারের লক্ষ্যে ১ জুলাই ২০২৪ তারিখে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনটি থেকে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি দেয়। দাবি না মেনে নিয়ে ১৪ জুলাই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এক বক্তব্যে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ হিসেবে অভিহিত করলে এ আন্দোলন তীব্র হয়। প্রতিবাদে ঢাবিসহ প্রত্যকটি ক্যাম্পাস থেকে বের হয় মিছিল। স্লোগান ছিল ” তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার”
এই স্লোগান এতই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে, মানুষের মুখে মুখে থাকে পুরো বছর জুড়ে। আন্দোলন দমাতে সরকার কঠোর হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতার পাশাপাশি মাঠে নামে সরকারি ক্যাডার বাহিনী ছাত্রলীগ ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
ছাত্র-জনতার উপর চলে নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার।
লাশ ও রক্তে ভাসে ঢাকার রাজপথ।আন্দোলনে প্রাণহানিকে ‘জুলাই গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে নয় দফা দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখে ছাত্রজনতা। জুলাই জুড়ে আন্দোলন চলেছে, আন্দোলনের মাঝে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রাণ গিয়েছে বহু শিক্ষার্থীর। রাজধানী ছাড়িয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে যায় দেশের প্রতিটি জেলা শহরে। দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীগণ আন্দোলনে নেমে পড়ে। ১৬ জুলাই পুলিশ নির্বিচারে গুলি করে রংপুরে। হতাহত হয় অনেকে। পুলিশের গুলির সামনে বীরদর্পে দাঁড়িয়ে যায় রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র আবু সাইদ। বুক চিতিয়ে দুই প্রসারিত করে পুলিশের সামনে দাঁড়ালে পুলিশ তার বুকে গুলি ছুড়ে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আবু সাইদ। হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।প্রথমবারের মত কোন প্রাণ গেল এই আন্দোলনে।১৮ জুলাই আন্দোলননরত শিক্ষার্থীদের পানি বিতরণ করতে এসে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন মুগ্ধ। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ কথা ” পানি লাগবে পানি?” স্মরণীয় হয়ে আছে।
মুগ্ধ ছিলেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর শিক্ষার্থী এবং দেশসেরা অন্যতম একজন ফ্রিল্যান্সার।
আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গ দাউদাউ করে জ্বলে উঠে সারাদেশে। গ্রামে গ্রামে ছাত্ররা সংগঠিত হতে থাকে সরকারের বিরুদ্ধে। অবস্থা বেগতিক দেখে আন্দোলনে নির্মূল সরকার নীল নকশা আঁকে। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট। পুরো দেশ ইন্টারনেটবিহীন। মানুষ টিভির পর্দায় খবর দেখে।কিন্তু যমুনা টিভি বাদে সকল টিভি চ্যানেল সরকারের ডেসক্রিপশন অনুযায়ী খবর প্রচার করে। দুই দফায় ইন্টারনেট বন্ধ করে গণহত্যায় মেতে উঠে সরকার।

১১ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পর ইন্টারনেট খুলে খুলে আন্দোলনের গতিবেগ আরো বৃদ্ধি পায়। ইন্টারনেট বন্ধ থাকাকালীন সময়ে সরকারের হত্যা, গুম ও নির্যাতনের ভিডিও প্রকাশ পেতে থাকে। পুরো দেশ তখন সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। সরকার ছাত্রদের সাথে সমাঝোতা করতে রাজি হলেও ছাত্ররা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় “রক্ত মাড়িয়ে কোন সংলাপ নয়।” নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সরকার কোটা আন্দোলনের দাবি মেনে নেয় কিন্তু এত লাশের পরে এই দাবি ছাত্র-জনতাকে সন্তুষ্ট করেনি। ছাত্র সরকারের কোটা সংস্কারকে স্বাগত জানালেও খুন, গুম ও নির্যাতনের জন্য সরকারকে ক্ষমা চাইতে এমন ৯টি দাবি পেশ করে। এই ৯দফা জনমনে বেশ সাড়া ফেলে। কিন্তু ৯দফা সরকার মেনে না নিয়ে কঠোর হস্তে আন্দোলন দমানোর লক্ষে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সহ সকল বাহিনী মাঠে নামায়। লাশের পর লাশ পরলেও সরকারের যেন কিছুই যায় আসে না।
ছাত্রদের সাথে নামে তাঁদের অভিভাবকগণ, মাঠে নামে সাবেক সেনাবাহিনীর অফিসারগণ, আইনজীবীগণ আদালতে ছাত্রদের পক্ষে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেয়।শোবিজ ও ক্রীড়াবিদরাও আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে।
আগস্ট মাস শুরু হলেও, নিজেদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আগস্ট মাসের দিনগুলোকেও জুলাই হিসেবে গণনা করেন বিক্ষোভকারীরা। তারপর গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে এবং বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। আন্দোলনের সফলতাকে আন্দোলনকারীরা ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ এবং এই দিনটিকে ‘৩৬ জুলাই’ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
লাশের পর পর লাশের হিস্যা বুঝে নিতে ছাত্ররা ৩ আগস্ট ঘোষণা করে ৬আগস্ট “লংমার্চ টু ঢাকা” কর্মসূচি। সরকার আরো ক্ষিপ্ত হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে ছাত্ররা ৪ আগস্ট পুনরায় ঘোষণা লংমার্চ টু ঢাকা পালিত হবে ৫ আগস্ট। সরকার বেকায়দায় পরে যায়।
এদিকে ৩ আগস্ট সেনাবাহিনী ছাত্রদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলে সরকার আরো বিপাকে পড়ে।
সেনাবাহিনী ঘোষণা দেয় তারা ছাত্রদের দিকে একটি গুলিও ছুড়বে না।

সরকারের দোষর অন্যন্য বাহিনী শহরের প্রতিটি পয়েন্টে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়।

৫ আগস্ট ২০২৪।
রাস্তাঘাট একতম ফাকা। কিন্তু হঠাৎ ছাত্র-জনতার ঢল শহরের প্রতিটি পয়েন্টে। লংমার্চ টু গণভবন শুরু হয়। এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে স্বৈরাচার হাসিনা বেলা ১১টার দিকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় ভারতে।

এই খবর গণমাধ্যমে ঘোষণা করেন তৎকালীন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। ছাত্র-জনতা মেতে উঠে আনন্দে।
সেদিন শহরের প্রতিটি মিষ্টির দোকান খালি হয়ে। আনন্দে মানুষ অলিতে গলিতে মিষ্টি বিতরণ করে। সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে বিপ্লবীদের উল্লাস করতে দেখা যায়। গণভবনের তৌহিদি জনতা যোহর ও আসরের নামায আদায়ের দৃশ্যের অবতারণা হয়।

হোয়াটসাঅ্যাপ চ্যাট
মেসেঞ্জার চ্যাট