সাম্প্রতিক নোটিশ

মানবপ্রেমী রাসূল (সা)

ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২৫ রাসুল (সা) থেকে জীবনের শিক্ষা

মানবপ্রেমী রাসূল (সা)
মানবতার নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তার আগমন পূর্ব যুগটি ছিল দলাদলি, হানাহানি ও রক্তারক্তির যুগ।
মানুষে মানুষে ছিল রক্ত, বর্ণ, ভাষা ও আভিজাত্যের দুর্লঙ্ঘনীয় প্রাচীর। সমাজ ছিল তখন পশুত্ব ও পৌত্তলিকতার নিকষকালো অন্ধকারে আচ্ছাদিত। মানুষ ছিল শান্তি হারা, অধিকারহারা, নির্মমভাবে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত। নারী জাতির অবস্থা ছিল খুবই শোচনীয়। এক কথায় তৎকালীন মানবসমাজে মুক্তি, শান্তি ও প্রগতির আশা হয়ে উঠেছিল সুদূরপরাহত। মানবেতিহাসের এই ঘোর দুর্দিনে বিশ্বমানবতার পরম বন্ধু মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবতার মুক্তির সনদ নিয়ে সুন্দর এই বসুন্ধরায় আগমন করেন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আমি তো আপনাকে বিশ্বজগতের প্রতি কেবল রহমতরূপেই পাঠিয়েছি।’ সুরা আম্বিয়া : ১০৭

মূলত নবী করিম (সা.)-এর আগমন ছিল মানবকুলের জন্য অপূর্ব নেয়ামত, রহমত ও চিরন্তন শান্তির মহান সওগাত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পরম বন্ধুরূপে অন্যায় ও অসাম্যকে তিরোহিত করে সাম্য ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠাই ছিল তার মহান ব্রত। তার আগমনে সমাজ যেভাবে উপকৃত হয়

ধর্মীয় অবস্থা : কোরআনে করিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘ইসলামই আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম।’ সুরা আলে ইমরান : ১৯

ইসলাম অন্যসব ধর্মমতকে বাতিল ঘোষণা দিয়ে ইহকালের পাথেয় ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র সনদরূপে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসলামকে সর্বকালীন ও বিশ্বজনীন পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম।’ সুরা মায়েদা : ৩

অর্থনৈতিক অবস্থা : দারিদ্র্য নিরসনে মহান আল্লাহর বাণী, ‘যাতে তোমাদের মধ্যে যারা বিত্তবান কেবল তাদের মধ্যেই ঐশ্বর্য আবর্তন না করে।’ এই বাণীর প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানব জীবনের অন্যান্য দিকের মতো অর্থনৈতিক দিকেরও বাস্তব সমাধান দিয়ে গেছেন। সুদভিত্তিক ঋণ, জুয়া, লটারি ইত্যাদি শোষণ মূলক ব্যবস্থা চিরতরে নিষিদ্ধ করে অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার প্রবর্তিত অর্থনৈতিক নীতিমালা অনুসরণে আজও মানবজাতিকে রাষ্ট্রের দাসত্ব ও পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে প্রকৃতভাবে সুখী করা সম্ভব।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি : একনায়কত্ব ও রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার যুগে মদিনায় এক নজিরবিহীন সাধারণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। প্রণয়ন করেন মদিনার সনদ। যেখানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলমানদের পরস্পরে সামাজিক শান্তি ও অগ্রগতির নিশ্চয়তাসহ, ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালনার্থে ৪৭টি শর্তসংবলিত নানাবিধ শর্ত ছিল।

সামাজিক মুক্তি : ষষ্ঠ শতকের আরব ছিল পাপের কলুষ কালিমায় আচ্ছন্ন। ‘জোর যার মুল্লুক তার’ ছিল তখনকার নীতি। নির্যাতিত মানবতা অমানুষিক পশুশক্তির শিকারে পরিণত হয়েছিল। এরূপ শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে মুক্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য গুমরে মরছিল নির্যাতিত, নিপীড়িত অসহায় মানুষের আত্মা। এমতাবস্থায় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোর অজ্ঞানতার কুসংস্কারাচ্ছন্ন বিশ্বসমাজে ইসলামের সুবিশাল জ্যোতি বিকিরণ করেন। নিঃস্ব ও অসহায়দের সেবা, অত্যাচারীদের বাধা দেওয়া, বঞ্চিতদের আশ্রয় এবং বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি-শৃঙ্খলা ও সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন করা প্রভৃতি কর্মসূচি সামনে রেখে যৌবনকালে তিনি তরুণদের নিয়ে ‘হিলফুল ফুজুল’ নামে কল্যাণধর্মী একটি সংগঠন গড়ে তুলেন। আমৃত্যু তিনি সংগ্রাম করে গেছেন সামাজিক শান্তি প্রতিষ্ঠায়।

নারীর অধিকার : ইসলাম আগমনের আগে দুনিয়া নারীকে অকল্যাণকর, সভ্যতা পরিপন্থী ও উন্নতির প্রতিবন্ধক মনে করা হতো। মানবতার পরম বন্ধু নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। নারী সমাজকে হীনতার নিম্ন অবস্থা থেকে স্থান দেন অনেক ঊর্ধ্বে। তাদের তুলনাহীন মর্যাদা ও ন্যায্য অধিকার দেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তার পূর্ণ নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, সম্পদে নারীর অধিকার। বলা হয়, নারী-পুরুষ উভয় উভয়ের জন্য ভূষণস্বরূপ। এমনকি হাদিসে বলা হয়, ‘নিশ্চয় সন্তানের বেহেশত মায়ের পদতলে।’

শিক্ষার পরিবেশ : নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ! যে জ্ঞান উপকারে আসে না আপনার কাছে তা থেকে পানাহ

চাই।’ সহিহ্ মুসলিম : ২৭২২

মানুষ কেবল অন্যান্য জীবের মতো নয়; বরং আধ্যাত্মিক তথা আদর্শিক জীবও বটে। যৌক্তিকতার মানদণ্ডে উন্নত মানুষই প্রকৃত মনুষ্যত্বের মানদণ্ড। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বাবা-মা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার চেয়ে উত্তম আর কিছুই দিতে পারে না।’ তিরমিজি : ১৯৫২

তাই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক নর-নারীর ওপর জ্ঞানার্জনকে বাধ্যতামূলক (ফরজ) ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘দীনি ইলম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ।’ ইবনে মাজাহ : ২২৪

পরকালীন মুক্তি : মহান আল্লাহর বাণী, তোমরা তো অগ্নিকাণ্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন।’ সুরা আলে ইমরান : ১০৩

এভাবে নানাভাবে, পরিস্থিতি ও অবস্থায় উম্মতকে সতর্ক করেন। এভাবেই মানবতার বন্ধু হিসেবে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নাম থেকে মানুষকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করে গেছেন। পার্থিব জীবনকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী সুন্দর-সুশৃঙ্খল এবং শান্তিময় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দিনভর প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। পরকালীন জীবনের কঠিন শাস্তি থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার এই বান্দাদের (উম্মত) দোষ-ত্রুটি ধরে যদি তুমি শাস্তি দাও, দিতে পার। যেহেতু তারা তোমার বান্দা! তুমি দয়া করে তাদের সৃষ্টি করেছ, তাদের যদি মাফ করে দাও তাও তুমি পারো, তোমার সব ক্ষমতা আছে। তুমি তাদের মাফ করে দাও।’

আমাদের আদর্শ : নবী মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। বিশ্বজগতের প্রতি আল্লাহর দয়ার বাস্তব নিদর্শন। প্রেম এবং করুণার সম্মিলন তার চরিত্রে অপূর্বভাবে বিমূর্ত হয়েছে। তার প্রচারিত নীতি এবং আদর্শ কালো-সাদা, আরব-অনারব, ধনী-গরিব, উচ্চ-নীচ সবাইকে এককাতারে শামিল করেছে। কালোত্তীর্ণ এ মহামানুষ দুনিয়ায় আল্লাহর গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ করে গেছেন। জগতের সব জড়চিন্তা, ভুয়া মতবাদ এবং মানবতাবৈরী সব শক্তিকে পর্যুদস্ত করে মানবতার এই মহান বন্ধু চির অমর হয়ে আছেন আমাদের মধ্যে। তিনিই আমাদের একমাত্র আদর্শ। তার চেয়ে বড় বন্ধু আর কোনো দিন কেউ হতে পারবে না।

কলামে:
মোশাররফ হোসেন ফারাবি

হোয়াটসাঅ্যাপ চ্যাট
মেসেঞ্জার চ্যাট